রুদ্রজ ব্রাহ্মণ ভিজিট করার জন্য আপনাকে সুস্বাগতম

ধর্ম , সাহিত্য , কলা এবং শিক্ষা

সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮

উপনিষদ্ পরিচয় UPANISHAD PARICHAY




প্রিয় পাঠক আপনাদের সবাইকে নমস্কার জানিয়ে শুরু করছি আলোচ্য বিষয় উপনিষদ্ পরিচয় । উপনিষদ হিন্দু ধর্মের মহত্ত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ । যা বৈদিক বাঙ্ময়ের অভিন্ন ভাগ । এখানে পরমাত্মা পরমেশ্বর ( ব্রহ্ম ) এবং আত্মার স্বভাব ও সম্বন্ধ নিয়ে বিস্তৃত দার্শনিক জ্ঞান বর্ণিত হয়েছে । ব্রহ্ম , জীব এবং জগৎসংসার বিষয়ক জ্ঞান লাভ করাই উপনিষদের মূল শিক্ষা । এবং উপনিষদের জ্ঞানের দ্বারাই জীবের মুক্তি সম্ভব । পণ্ডিৎগণ উপনিষদের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ করতে বলেছেন - উপ ( কাছে ) + নি ( সঠিক জায়গায় , নিচে ) + ষদ্ ( বসা ) এই শব্দাংশের সমষ্টি । অর্থাৎ কাছে নিচু আসনে বসা বা শিক্ষা লাভের জন্য গুরুর কাছে নিচু আসনে এসে বসা । আবার বলেছে উপ এবং নি উপসর্গের সংগে সদ্ ধাতু যুক্ত হয়ে উপনিষদ্ শব্দ হয়েছে । সুতরাং এর শাব্দিক অর্থ হল তত্ত্বজ্ঞানের জন্য গুরুর নিকট সবিনয়ে উপবেশন করা । সদ ধাতুর অন্য তিন প্রকার অর্থ হচ্ছে বিনাশ , গতি বা প্রাপ্ত করা এবং শিথিল হওয়া । অতঃ উপনিষদ্ সেই বিদ্যার নাম যা অনুশীলন করলে মুমুক্ষু ব্যক্তির অবিদ্যা বিনাশ হয়ে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয় এবং দুঃখ শিথিল হয়ে যায় । বৈদিক বাঙ্ময়ের অন্তিম ভাগ হওয়ার ফলে উপনিষদকে 'বেদান্ত' বলা হয় । কিংবা সম্পূর্ণ বেদের সার হওয়ার জন্য তাকে বেদান্ত বলা হয়ে থাকে । মুখ্য উপনিষদ গুলিকে 3000--3500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে রচিত বলে মনে করা হয় , অর্থাৎ বেদের সমকালীন রচনা বলে বিবেচিত । মুখ্য বা প্রধান উপনিষদ বলতে আদি গুরু শঙ্করাচার্য্য যে এগারোটি উপনিষদের ভাষ্য লিখেছেন । যথা - ঈশ , কেন , কঠ , মুণ্ডক , মাণ্ডূক্য , তৈত্তিরীয় , ঐতরেয় , প্রশ্ন , শ্বেতাশ্বতর , ছান্দোগ্য এবং বৃহদারণ্যক ইত্যাদি । এছাড়া তিনি কৌষিতকী এবং মৈত্রায়ণী নামক এই দুই উপনিষদকেও প্রমাণ সাপেক্ষ রূপে চিহ্নিত করেন । এই তেরোটি উপনিষদ সর্বমান্য এবং শ্রুতি বলে পঠিত হয় । বাকি অপ্রধান উপনিষদগুলির মধ্যে অধিকাংশই মধ্যযুগ এবং প্রাক্ আধুনিক যুগের রচনা । এই নতুন উপনিষদগুলো প্রধানত সম্প্রদায়ভিত্তিক । কারণ , বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শ্রুতিশাস্ত্রের দোহাই দিয়ে নিজেদের মতকে ধর্মসঙ্গত করার প্রবণতা ছিল । আজ পর্যন্ত 220টির মতো উপনিষদ্ পাওয়া গিয়েছে । মধ্যযুগে রচিত মুক্তিক উপনিষদে 108 উপনিষদের নাম বর্ণিত রয়েছে । এজন্য অনেকে একশোআট উপনিষদ কথাটি বলে থাকেন । আমি পাঠকগণের সুবিধার্থে 108 উপনিষদের নাম সুচিবদ্ধ করলাম ।
1- ईशावास्योपनिषद् /ইশাবাস্যোপনিষদ্
2- केनोपनिषद्  / কেনোপনিষদ্
3- कठोपनिषद् / কঠোপনিষদ্
4- प्रश्नोपनिषद् / প্রশ্নোপনিষদ্
5- मुण्डकोपनिषद् / মুণ্ডকোপনিষদ্
6- माण्डूक्योपनिषद् /  মাণ্ডূক্যোপনিষদ্
7- ऐतरेयोपनिषद् / ঐতরেয়োপনিষদ্
8- तैत्तिरीयोपनिषद् / তৈত্তিরীয়োপনিষদ্
9- छान्दोग्योपनिषद् / ছান্দোগ্যোপনিষদ্
10- बृहदारण्यकोपनिषद् / বৃহদারণ্যকোপনিষদ্
11- श्वेताश्वतरोपनिषद् / শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ্
12- कौषीतकि ब्राह्मणोपनिषद् / কৌষীতকি ব্রাহ্মণোপনিষদ্
13-मैत्रायण्युपनिषद् / মৈত্রায়ণ্যুপনিষদ্
14- कैवल्योपनिषद् / কৈবল্যোপনিষদ্
15- रुद्रहृदयोपनिषद् / রুদ্রহৃদয়োপনিষদ্
16- अमृतनादोपनिषद् / অমৃতনাদোপনিষদ্
17- एकाक्षरोपनिषद् /একাক্ষরোপনিষদ্
18- गायत्र्युपनिषद् /গায়ত্র্যুপনিষদ্
19- नादबिन्दूपनिषद् /নাদবিন্দূপনিষদ্
20- निरालम्बोपनिषद् / নিরালম্বোপনিষদ্
21- प्रणवोपनिषद् / প্রণবোপনিষদ্
22- मन्त्रिकोपनिषद् / মন্ত্রিকোপনিষদ্
23- शिवसंकल्पोपनिषद् / শিবসঙ্কল্পোপনিষদ্
24- शुकरहस्योपिषद् / শুকরহস্যোপনিষদ্
25- सर्वसारोपनिषद् / সর্বসারোপনিষদ্
26- स्कन्दोपनिषद् / স্কন্দোপনিষদ্
27- अथर्वशिर उपनिषद् / অথর্বশির উপনিষদ্
28- अध्यात्मोपनिषद् / অধ্যাত্মোপনিষদ্
29- अवधूतोपनिषद् / অবধূতোপনিষদ্
30- आत्मपूजोपनिषद् / আত্মপূজোপনিষদ্
31- आत्मबोधोपनिषद् / আত্মবোধোপনিষদ্
32- आत्मोपनिषद् / আত্মোপনিষদ্
33- आरुण्युपनिषद् / আরুণ্যুপনিষদ্
34- आश्रमोपनिषद् / আশ্রমোপনিষদ্
35- कठरुद्रोपनिषद् / কঠরুদ্রোপনিষদ্
36- कुण्डिकोपनिषद् / কুণ্ডিকোপনিষদ্
37- क्षुरिकोपनिषद् / ক্ষুরিকোপনিষদ্
38- जाबालदर्शनोपनिषद् / জাবালদর্শনোপনিষদ্
39- जाबालोपनिषद् / জাবালোপনিষদ্
40- जाबाल्युपनिषद् / জাবাল্যুপনিষদ্
41- तुरीयातीतोपनिषद् / তুরীয়াতীতোপনিষদ্
42- द्वयोपनिषद् / দ্বয়োপনিষদ্
43- नारदपरिव्राजकोपनिषद् / নারদপরিব্রাজকোপনিষদ্
44- निर्वाणोपनिषद् / নির্বাণোপনিষদ্
45- पंच ब्रह्मोपनिषद् / পঞ্চব্রহ্মোপনিষদ্
46- परमहंस परिव्राजकोपनिषद् / পরমহংস পরিব্রাজকোপনিষদ্
47- परमहंसोपनिषद् / পরমহংসোপনিষদ্
48- पैङ्गलोपनिषद् / পৈঙ্গলোপনিষদ্
49- ब्रह्मबिन्दुपनिषद् / ব্রহ্মবিন্দুপনিষদ্
50- ब्रह्मविद्योपनिषद् / ব্রহ্মবিদ্যোপনিষদ্
51- ब्रह्मोपनिषद् / ব্রহ্মোপনিষদ্
52- भिक्षुकोपनिषद् / ভিক্ষুকোপনিষদ্
53- मण्डलब्राह्मणोपनिषद् / মণ্ডলব্রাহ্মণোপনিষদ্
54- महावाक्योपनिषद् / মহাবাক্যোপনিষদ্
55- मैत्रेय्युपनिषद् / মৈত্রেয়্যুপনিষদ্
56- याज्ञवल्क्योपनिषद् / যাজ্ঞবল্ক্যোপনিষদ্
57- योगतत्त्वोपनिषद् / যোগতত্ত্বোপনিষদ্
58- वज्रसूचिकोपनिषद् / বজ্রসূচিকোপনিষদ্
59- शारीरकोपनिषद् / শারীরকোপনিষদ্
60- संन्यासोपनिषद् / সন্ন্যাসোপনিষদ্
61- सुबालोपनिषद् / সুবালোপনিষদ্
62- स्वसंवेद्योपनिषद् / স্বসংবেদ্যোপনিষদ্
63- हंसोपनिषद् / হংসোপনিষদ্
64- अक्षमालिकोपनिषद् / অক্ষমালিকোপনিষদ্
65- अक्ष्युपनिषद् / অক্ষ্যুপনিষদ্
66- अद्वयतारकोपनिषद् / অদ্বয়তারকোপনিষদ্
67- कलिसंतरणोपनिषद् / কলিসন্তরণোপনিষদ্
68- कालाग्निरुद्रोपनिषद् / কালাগ্নিরুদ্রোপনিষদ্
69- कृष्णोपनिषद् / কৃষ্ণোপনিষদ্
70- गणपत्युपनिषद् / গণপত্যুপনিষদ্
71- गरुड़ोपनिषद् / গরুড়োপনিষদ্
72- गायत्रीरहस्योपनिषद् / গায়ত্রীরহস্যোপনিষদ্
73- गोपालपूर्वतापिन्युपनिषद् / গোপালপূর্বতাপিন্যুপনিষদ্
74- चतुर्वेदोपनिषद् / চতুর্বেদোপনিষদ্
75- चाक्षुषोपनिषद् / চাক্ষুষোপনিষদ্
76- तुलस्युपनिषद् / তুলস্যুপনিষদ্
77- त्रिपुरोपनिषद् / ত্রিপুরোপনিষদ্
78- त्रिशिखिब्राह्मणोपनिषद् / ত্রিশিখিব্রাহ্মণোপনিষদ্
79- दक्षिणामूर्त्युपनिषद् / দক্ষিণামূর্ত্যুপনিষদ্
80- देव्युपनिषद् / দেব্যুপনিষদ্
81- ध्यानबिन्दूपनिषद् / ধ্যানবিন্দূপনিষদ্
82- नारायणोपनिषद् / নারায়ণোপনিষদ্
83- नीलरुद्रोपनिषद् / নীলরুদ্রোপনিষদ্
84- नृसिंहपूर्वतापिन्युपनिषद् / নৃসিংহপূর্বতাপিন্যুপনিষদ্
85- नृसिंहषट्चक्रोपनिषद् / নৃসিংহষট্ চক্রোপনিষদ্
86- पाशुपत ब्राह्मणोपनिषद् / পাশুপত ব্রাহ্মণোপনিষদ্
87- प्राणाग्निहोत्रोपनिषद् / প্রাণাগ্নিহোত্রোপনিষদ্
88- बह्ववृचोपनिषद् / বহ্ববৃচোপনিষদ্
89- भावनोपनिषद् / ভাবনোপনিষদ্
90- महोपनिषद् / মহোপনিষদ্
91- योगकुण्डल्युपनिषद् / যোগকুণ্ডল্যুপনিষদ্
92- योगचूड़ामण्युपनिषद् / যোগচূড়ামণ্যুপনিষদ্
93- योगराजोपनिषद् / যোগরাজোপনিষদ্
94- राधोपनिषद् / রাধোপনিষদ্
95- रामपूर्वतापिन्युपनिषद् / রামপূর্বতাপিন্যুপনিষদ্
96- रुद्राक्षजाबालोपनिषद् / রুদ্রাক্ষজাবালোপনিষদ্
97- रुद्रोपनिषद् / রুদ্রোপনিষদ্
98- लांगूलोपनिषद् / লাঙ্গূলোপনিষদ্
99- शरभोपनिषद् / শরভোপনিষদ্
100- सरस्वती रहस्योपनिषद् / সরস্বতী রহস্যোপনিষদ্
101- सावित्र्युपनिषद् / সাবিত্র্যুপনিষদ্
102- सीतोपनिषद् / সীতোপনিষদ্
103- सूर्योपनिषद् / সূর্যোপনিষদ্

104- सौभाग्यलक्ष्म्युपनिषद् / সৌভাগ্যলক্ষ্ম্যুপনিষদ্
105- मुद्गलोपनिषद् / মুদ্গলোপনিষদ্
106- परब्रह्मोपनिषद् / পরব্রহ্মোপনিষদ্
107- शाट्यायनीयोपनिषद् / শাট্যায়নীয়োপনিষদ্
108- शाण्डिल्योपनिषद् / শাণ্ডিল্যোপনিষদ্
নমস্কার বন্ধুরা ভালো লাগলে পোস্টটি অবশ্যই শেয়ার করুন ।
ওঁ নমঃ শিবায় , হর হর মহাদেব ।

রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮

পরমেশ্বরের নাম

নমস্কার , প্রিয় পাঠকগণ আজকে আমি পরমাত্মা পরমেশ্বরের নাম বা উপাধি নিয়ে কিছু আলোচনা করব । আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে ।

পরমাত্মা পরমেশ্বর নির্গুণ নিরাকার কিন্তু আবার তিনি সর্বগুণ সম্পন্ন , সর্বাধার , সর্বজ্ঞ । পরমেশ্বরের অনন্ত গুণ , অনন্ত কর্ম এবং অনন্ত তার স্বভাব । পরমেশ্বর নাম উপাধিরহিত হওয়া সত্বেও অনন্ত নামে পরিচিত । আমরা সকলেই ' শিবসহস্রনাম ' এবং ' বিষ্ণুসহস্রনাম ' এর কথা শুনেছি । প্রত্যেক প্রকার গুণ , কর্ম এবং স্বভাবের নিমিত্ত এক এক নাম কল্পিত হয়েছে । পরমাত্মা পরমেশ্বর অনন্ত , তিনি অসীম তাই এই সহস্র নামও বিশাল সমুদ্রের সামনে বিন্দুবৎ  বলে মনে হয় । আমি পরমেশ্বরের কয়েকটি নাম কারণ সহ উপস্থাপন করছি ।
1-- শিবু কল্যাণে - এই ধাতু দ্বারা ' শিব ' শব্দ সিদ্ধ হয় । কল্যাণস্বরূপ এবং কল্যাণকারী হওয়ার জন্য পরমেশ্বর ' শিব ' নামে বিখ্যাত ।
2-- ' যো মহতাং দেবঃ স মহাদেবঃ ' যিনি মহান দেবগণের দেব অর্থাৎ বিদ্বানগণেরও বিদ্বান , সূর্য্যাদি পদার্থের প্রকাশক তিনি মহাদেব । তাই পরমেশ্বরের নাম মহাদেব ।
3--' যঃ শঙ্কল্যাণং সুখং করোতি স শঙ্করঃ ' যিনি কল্যাণ এবং সুখ প্রদানকারী তিনি শঙ্কর । এইভাবে পরমেশ্বরের নাম শঙ্কর ।
4-- ' যো বিশ্বং বিভর্তি ধরতি পুষ্ণাতি বা স বিশ্বম্ভরো জগদীশ্বরঃ ' যিনি বিশ্বকে ধারণ এবং পোষণ করে থাকেন  , সেই পরমেশ্বর বিশ্বম্ভর নামে পরিচিত ।
5-- ' যোহখিলং জগন্নির্মাণেন বর্হতি বর্দ্ধয়তি স ব্রহ্মা ' যিনি সম্পূর্ণ অখিল জগৎ নির্মাণ পূর্বক বর্দ্ধিত করেন , তিনি ব্রহ্মা । তাই পরমেশ্বরের নাম ব্রহ্মা ।
6-- ' যো রোদয়ত্যন্যায়কারিণো জনান্ স রুদ্রঃ ' যিনি অন্যায়কারীকে দণ্ড দিয়ে রোদন ( কান্না ) করান তিনি  রুদ্র । তাই পরমেশ্বরের নাম রুদ্র ।
7-- ' আপো নারা ইতি প্রোক্তা আপো বৈ নরসূনবঃ তা যদস্যায়নং পূর্বং তেন নারায়ণঃ স্মৃতঃ ।' জল এবং জীবের নাম ' নারা ' সে অয়ন অর্থাৎ নিবাসস্থান যার , সেই সর্বপ্রাণীর মধ্যে ব্যাপক পরমাত্মার নাম নারায়ণ ।
8-- ' বেবেষ্টি ব্যাপ্নোতি চরাহচরং জগৎ স বিষ্ণুঃ ' চর এবং অচররূপ জগৎসংসারে ব্যাপক হওয়ার ফলে পরমাত্মার নাম বিষ্ণু ।
9-- ' য ইন্দতি পরমৈশ্বর্য্যবান্ ভবতি স ইন্দ্রঃ পরমেশ্বরঃ ' -- যিনি অখিল ঐশ্বর্য্যযুক্ত হন তিনি পরমেশ্বর ইন্দ্র ।
10-- ' যো লক্ষয়তি পশ্যত্যঙ্কতে চিহ্নয়তি চরাচরং জগদথবা বেদৈরাপ্তৈর্যোগিভিশ্চ যো লক্ষ্যতে স লক্ষ্মীঃ সর্বপ্রিয়েশ্বরঃ ' - যিনি সম্পূর্ণ চরাচর জগৎকে দেখেন , চিহ্নিত করেন অর্থাৎ দৃশ্য বানান , যেমন - শরীরের নেত্র নাসিকাদি এবং বৃক্ষের পত্র পুষ্প ফল মূল , পৃথিবী , জল , মৃত্তিকা , পাষাণ , চন্দ্র , সূর্য্যাদি চিহ্ন বানান তথা সকলকে দেখেন , সমস্ত শোভনীয় বস্তুর শোভা এবং যিনি বেদাদি শাস্ত্রজ্ঞ বা ধার্মিক বিদ্বান যোগিগণের লক্ষ্য অর্থাৎ দেখার যোগ্য সেই পরমেশ্বরের নাম ' লক্ষ্মী ।'
11-- ' সরো বিবিধং জ্ঞানং বিদ্যতে যস্যাং চিতৌ সা সরস্বতী ' -- যার বিবিধ জ্ঞান অর্থাৎ শব্দ অর্থ সম্বন্ধ প্রয়োগের জ্ঞান যথাবৎ হয় , সেই পরমেশ্বরের নাম সরস্বতী ।
12-- ' যঃ সর্বং জগৎ কর্তুং শক্নোতি স শক্তিঃ ' - যিনি সম্পূর্ণ জগৎকে তৈরী করতে সমর্থ তিনি শক্তি । এভাবে পরমেশ্বরের নাম ' শক্তি ' নামে পরিচিত ।
13-- ' যো বিশ্বমীষ্টে স বিশ্বেশ্বরঃ ' - যিনি বিশ্বসংসারের অধিষ্ঠাতা তিনি বিশ্বেশ্বর । এভাবে পরমেশ্বরের নাম " বিশ্বেশ্বর" বলে জগৎ বিখ্যাত ।
14-- ' যে প্রকৃত্যাদয়ো জড়া জীবাশ্চ গণ্যন্তে সংখ্যায়ন্তে তেষামীশঃ স্বামী পতিঃ পালকো বা ' -- যিনি প্রকৃতি আদি জড় এবং সকল প্রকার জীব প্রখ্যাত পদার্থের স্বামী এবং পালনকারী , এর দ্বারা সেই ঈশ্বরের নাম গণেশ বা গণপতি ।
15-- ' অঞ্জনং ব্যক্তির্ম্লক্ষণং কুকাম ইন্দ্রিয়ৈঃ প্রাপ্তিশ্চেত্যস্মাদ্যো নির্গতঃ পৃথগ্ভূতঃ স নিরঞ্জনঃ ' -- যে ব্যক্তি অর্থাৎ আকৃতি ম্লেচ্ছাচার , দুষ্টকামনা এবং চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের বিষয় বাসনার মার্গ থেকে পৃথক সে নিরঞ্জন । তাই পরমেশ্বর ' নিরঞ্জন ' নামে অভিহিত ।
16-- ' যস্মাৎ পূর্বং নাস্তি পরং চাস্তি স আদিরিত্যুচ্যতে , ন বিদ্যতে আদিঃ কারণং যস্য সোহনাদিরীশ্বরঃ ' - যার পূর্বে আর কিছুই নেই এবং সবকিছুর পরম , তাকে আদি বলা হয় , যার আদি কারণ কোনও কিছুই নেই সেই ঈশ্বর অনাদি নামে পরিচিত ।
17-- ' অন্তর্যন্তুং নিয়ন্তুং শীলং যস্য সোহয়মন্তর্যামী ' -- যিনি সমস্ত প্রাণী এবং অপ্রাণীরূপ জগতের অন্তরে ব্যাপক হয়ে সকলকে নিয়মিত চালিত করেন , তিনি অন্তর্যামী । এভাবে পরমেশ্বরের এক নাম অন্তর্যামী ।
18-- ' ভগঃ সকলৈশ্বর্য্যং সেবনং বা বিদ্যতে যস্য স ভগবান্ ' -- যিনি সমগ্র ঐশ্বর্য্যযুক্ত এবং ভজনা করার যোগ্য তিনি ভগবান । এভাবে পরমাত্মা পরমেশ্বরের নাম ' ভগবান ' প্রাপ্ত হয়েছে । প্রিয় বন্ধুগণ , আজ এই পর্যন্ত । আশা করি ভালো লেগেছে । আর ভালো লাগলে অবশ্যই আপনজনের মাঝে শেয়ার করতে পারেন ।
ওঁ নমঃ শিবায় , হর হর মহাদেব ।

সোমবার, ১৮ জুন, ২০১৮

Atmagyan আত্মজ্ঞান

নমস্কার বন্ধুগণ , আজকে আমি জীবদেহে আত্মার স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করবো । আদি গুরু শঙ্করাচার্য্য তার রচিত তত্ত্ববোধ এবং আত্মবোধ গ্রন্থে আত্মার স্বরূপ বলতে বলেছেন আত্মা সৎ , চিৎ , আনন্দময় । তার যথাযথ ব্যাখ্যা আমি এখানে উপস্থাপন করলাম ।
প্রশ্ন :-আত্মা কঃ ? (আত্মা কি ?)
উ :- সচ্চিদানন্দস্বরূপঃ ( আত্মা সৎ , চিৎ তথা আনন্দ স্বরূপ )
সৎ কিম্ ? ( সৎ কি ? )
উ :- কালত্রয়েহপি তিষ্ঠতীতি সৎ ( যা তিন কালেই সমানভাবে একরস থাকে তাই সৎ )
অর্থাৎ যা অতীত , বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এই তিনকালেই সমানরূপে একরস থাকে , যার জন্ম নেই , মৃত্যু নেই , যার বৃদ্ধি নেই , ক্ষয় নেই , যার রূপের পরিবর্তন হয় না , যার কোনও বিকার নেই এবং যা পূর্ণ , নানা প্রকার সৃষ্টি নির্মাণের পরেও যার পূর্ণতার হ্রাস হয় না এমন সর্বদা পূর্ণ তত্ত্বকে সৎ বলা হয় । শরীরের অন্য সবকিছুই মিথ্যা যার কোনও স্থায়িত্ব নেই । একমাত্র আত্মার স্থায়িত্ব থাকায় আত্মাকে ' সৎ ' বলা হয় ।
এবার প্রশ্ন চিৎ কিম্ ? ( চিৎ কি ? )
উত্তর :- জ্ঞানস্বরূপঃ ( জ্ঞান স্বরূপই চিৎ )
ব্যাখ্যা :- এই সম্পূর্ণ সৃষ্টিতে একমাত্র চেতন (চিৎ) তত্ত্বকে জ্ঞান স্বরূপ বলা হয় । চেতন শক্তি দ্বারাই সবকিছু জানা যায় । জড় প্রকৃতিতে জ্ঞান হয় না তাই তার দ্বারা কিছুই জানা যায় না ।  দেখা , জানা ও অনুভব করা প্রভৃতি কার্য্য চেতন (চিৎ) তত্ত্বই করে থাকে । শরীরের মধ্যে সেই চেতন তত্ত্বকে আত্মা বলা হয় । বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত পদার্থ চেতন তত্ত্বের দ্বারাই চেনা যায় , জানা যায় , দেখা যায় সুতরাং চেতন তত্ত্বই একমাত্র দ্রষ্টা । অন্য কিছুতেই দেখার শক্তি নেই তাই আত্মাই (চেতন তত্ত্বই) জ্ঞানস্বরূপ । জ্ঞান চেতনার গুণ , জড় পদার্থের নয় । তাই আত্মা চৈতন্য (চিৎ) স্বরূপ যা আত্মার দ্বিতীয় গুণ ।
এবার তৃতীয় গুণ আনন্দের নিমিত্য প্রশ্ন - আনন্দঃ কঃ? ( আনন্দ কি ?)
উত্তরে জগৎগুরু আদি শঙ্করাচার্য্য বলছেন - সুখস্বরূপঃ ( সুখ স্বরূপই আনন্দ )
ব্যাখ্যা :- এই সৃষ্টিতে আত্মাই একমাত্র শুদ্ধ , নির্বিকার , সৎ , চিৎ এবং আনন্দ তত্ত্ব বলে বিবেচিত । আত্মাই জ্ঞান স্বরূপ । অন্য সকলকিছু জড় প্রকৃতি দ্বারা নির্মিত যা অসত্য , অশুদ্ধ , জড় , বিকার লভ্য এবং দুঃখ স্বরূপ । আত্মজ্ঞানের অভাবে যখন মানুষ জড় প্রকৃতিকে অথবা শরীর , মন , আদিকে নিজের স্বরূপ বলে জ্ঞান করে থাকে তখন সে দুঃখের কারণ হয়ে যায় । আবার যখন মানুষ এইসব অজ্ঞান তথা ভ্রান্তিকে দূর করে পুনরায় আত্মাকে নিজের স্বরূপ বলে মেনে নেয় , তখন সে সকল প্রকার দুঃখকে দূর করে পরমানন্দ  বোধ করে থাকে । এটাই মানুষের জ্ঞানাবস্থা , যাকে প্রাপ্ত করে মনুষ্য সমস্ত প্রকার রোগ , শোক , দুঃখ , ক্লেশ , সন্তাপ ইত্যাদি থেকে মুক্ত হয়ে যায় । সে আনন্দ সাগরে নিমগ্ন থাকে , তার শাশ্বত সুখের অনুভূতি হয় । সে সকল প্রকার সাংসারিক দ্বন্দ্ব অতিক্রম করে থাকে কারণ আত্মা দ্বন্দ্বরহিত , সুখস্বরূপ এবং আনন্দস্বরূপ । যতক্ষণ মানুষ প্রকৃতিকে নিজের স্বরূপ মানতে থাকবে ততক্ষণ সে কখনই দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারবে না । আত্মজ্ঞানই পরম সুখের একমাত্র উপায় ।
ওঁ নমঃ শিবায় , হর হর মহাদেব ।

উপনিষদ্ পরিচয় UPANISHAD PARICHAY

প্রিয় পাঠক আপনাদের সবাইকে নমস্কার জানিয়ে শুরু করছি আলোচ্য বিষয় উপনিষদ্ পরিচয় । উপনিষদ হিন্দু ধর্মের মহত্ত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ । যা ব...