শিবগীতা :- বিশ্বরূপ দর্শন নামক সপ্তম অধ্যায় :--
ব্যাপ্নোষি সর্বা বিদিশো দিশশ্চ ত্বং বিশ্বমেকঃ পুরুষঃ পুরাণঃ। নষ্টেহপি তস্মিংস্তব নাস্তি হানির্ঘটে বিনষ্টে নভসো যথৈব ।।34।।
যথৈকমাকাশগমর্কবিম্ব ক্ষুদ্রেষু পাত্রেষু জলান্বিতেষু । ভজত্যনেকপ্রতিবিম্বভাবং তথা ত্বমন্তঃকরণেষু দেব ।।35।। ___________________________অনুবাদ :- আপনিই একমাত্র পুরাতন পুরুষ , সমস্ত দিক - বিদিক এবং সম্পূর্ণ বিশ্ব পরিব্যাপ্ত হয়ে বিরাজ করছেন । এই জগৎ ধ্বংস হয়ে গেলেও আপনার বিনাশ হয় না । যেমন করে ঘট নষ্ট বা ভেঙে গেলেও ঘটে ব্যাপ্ত আকাশের হানি হয় না ।
ব্যাখ্যা :-- বিশ্বরূপ দর্শণ করার পর রামচন্দ্র ঈশ্বরের প্রকৃত স্বরূপ জানতে পারেন । তাই তিনি পরমেশ্বর শিবকে বলছেন , হে প্রভু ! আপনিই ঈশ্বররূপে সর্বব্যাপী এবং বিনাশহীন । আপনি সর্বত্র বিরাজিত , আপনার থেকেই এই সম্পূর্ণ জগৎ সৃষ্টি হয়েছে । সৃষ্টির বিনাশ হয়ে গেলেও আপনার বিনাশ হয় না । যেমন ঘট ভেঙে গেলেও ঘটের ভেতরের আকাশ নষ্ট হয় না , সে বাহ্য আকাশে মিশে যায় । তেমনই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে গেলেও আপনার বিনাশ হয় না । ঘট নষ্ট হতে পারে কিন্তু তার মাটি নষ্ট হয় না , যার থেকে নতুন ঘটের নির্মাণ হতে পারে । অনরূপ ভাবে বিনাশহীন ঈশ্বর হতে পুনঃ নতুন সৃষ্টি হয় ।।34।।
যে প্রকার আকাশে একমাত্র সূর্য্যের বিম্ব জলপূর্ণ ছোট ছোট পাত্রে প্রতিবিম্বিত হয়ে অনেক প্রকার বলে মনে হয় , সেই প্রকার আপনি এক এবং অদ্বিতীয় হয়েও নানা লোকের নানা অন্তরে নানা রূপে প্রকাশিত হন।
ব্যাখ্যা :-- সমস্ত শরীরধারীর মধ্যে যে আত্মা রয়েছে সেইসব আত্মা কি ভিন্ন ভিন্ন না এক । এই ভাবনাকে স্পষ্ট করার জন্য রামচন্দ্র বলছেন , একই সূর্য্যকে , একই প্রকাশকে যদি পৃথক পৃথক রূপের অনেক জলপাত্রে দেখা যায় , তবে একই সূর্য্যকে অনেক এবং ভিন্ন ভিন্ন বলে মনে হবে । অজ্ঞানীজন পাত্রের ভিন্নতার কারণ সূর্য্যকেই ভিন্ন ভিন্ন বা অনেক মনে করেন । তারা ভাবেন ভিন্ন পাত্রে ভিন্ন সূর্য্য রয়েছে । ঠিক এভাবেই বিভিন্ন মানুষের অন্তঃকরণরূপী পাত্রে একই ঈশ্বরের বিম্ব পতিত হয় কিন্তু অজ্ঞানীজন আত্মাকে ভিন্ন ভিন্ন বিবেচনা করে বলে থাকেন যে , সকলের আত্মা ভিন্ন ভিন্ন হয় । বাস্তবে অন্তঃকরণই ভিন্ন ভিন্ন হয় , আত্মা সকলের একই হয় । যে ব্যাক্তি অন্তঃকরণকেই আত্মা মনে করেন সেই ব্যাক্তি আত্মাকে ভিন্ন ভিন্ন বা অনেক বলে মনে করেন ।।35।।
নমস্কার বন্ধুগণ ভালো লাগলে পোস্টটিকে অবশ্যই সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন ।
ওঁ নমঃ শিবায় , হর হর মহাদেব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন