রুদ্রজ ব্রাহ্মণ ভিজিট করার জন্য আপনাকে সুস্বাগতম

ধর্ম , সাহিত্য , কলা এবং শিক্ষা

সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮

উপনিষদ্ পরিচয় UPANISHAD PARICHAY




প্রিয় পাঠক আপনাদের সবাইকে নমস্কার জানিয়ে শুরু করছি আলোচ্য বিষয় উপনিষদ্ পরিচয় । উপনিষদ হিন্দু ধর্মের মহত্ত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ । যা বৈদিক বাঙ্ময়ের অভিন্ন ভাগ । এখানে পরমাত্মা পরমেশ্বর ( ব্রহ্ম ) এবং আত্মার স্বভাব ও সম্বন্ধ নিয়ে বিস্তৃত দার্শনিক জ্ঞান বর্ণিত হয়েছে । ব্রহ্ম , জীব এবং জগৎসংসার বিষয়ক জ্ঞান লাভ করাই উপনিষদের মূল শিক্ষা । এবং উপনিষদের জ্ঞানের দ্বারাই জীবের মুক্তি সম্ভব । পণ্ডিৎগণ উপনিষদের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ করতে বলেছেন - উপ ( কাছে ) + নি ( সঠিক জায়গায় , নিচে ) + ষদ্ ( বসা ) এই শব্দাংশের সমষ্টি । অর্থাৎ কাছে নিচু আসনে বসা বা শিক্ষা লাভের জন্য গুরুর কাছে নিচু আসনে এসে বসা । আবার বলেছে উপ এবং নি উপসর্গের সংগে সদ্ ধাতু যুক্ত হয়ে উপনিষদ্ শব্দ হয়েছে । সুতরাং এর শাব্দিক অর্থ হল তত্ত্বজ্ঞানের জন্য গুরুর নিকট সবিনয়ে উপবেশন করা । সদ ধাতুর অন্য তিন প্রকার অর্থ হচ্ছে বিনাশ , গতি বা প্রাপ্ত করা এবং শিথিল হওয়া । অতঃ উপনিষদ্ সেই বিদ্যার নাম যা অনুশীলন করলে মুমুক্ষু ব্যক্তির অবিদ্যা বিনাশ হয়ে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয় এবং দুঃখ শিথিল হয়ে যায় । বৈদিক বাঙ্ময়ের অন্তিম ভাগ হওয়ার ফলে উপনিষদকে 'বেদান্ত' বলা হয় । কিংবা সম্পূর্ণ বেদের সার হওয়ার জন্য তাকে বেদান্ত বলা হয়ে থাকে । মুখ্য উপনিষদ গুলিকে 3000--3500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে রচিত বলে মনে করা হয় , অর্থাৎ বেদের সমকালীন রচনা বলে বিবেচিত । মুখ্য বা প্রধান উপনিষদ বলতে আদি গুরু শঙ্করাচার্য্য যে এগারোটি উপনিষদের ভাষ্য লিখেছেন । যথা - ঈশ , কেন , কঠ , মুণ্ডক , মাণ্ডূক্য , তৈত্তিরীয় , ঐতরেয় , প্রশ্ন , শ্বেতাশ্বতর , ছান্দোগ্য এবং বৃহদারণ্যক ইত্যাদি । এছাড়া তিনি কৌষিতকী এবং মৈত্রায়ণী নামক এই দুই উপনিষদকেও প্রমাণ সাপেক্ষ রূপে চিহ্নিত করেন । এই তেরোটি উপনিষদ সর্বমান্য এবং শ্রুতি বলে পঠিত হয় । বাকি অপ্রধান উপনিষদগুলির মধ্যে অধিকাংশই মধ্যযুগ এবং প্রাক্ আধুনিক যুগের রচনা । এই নতুন উপনিষদগুলো প্রধানত সম্প্রদায়ভিত্তিক । কারণ , বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শ্রুতিশাস্ত্রের দোহাই দিয়ে নিজেদের মতকে ধর্মসঙ্গত করার প্রবণতা ছিল । আজ পর্যন্ত 220টির মতো উপনিষদ্ পাওয়া গিয়েছে । মধ্যযুগে রচিত মুক্তিক উপনিষদে 108 উপনিষদের নাম বর্ণিত রয়েছে । এজন্য অনেকে একশোআট উপনিষদ কথাটি বলে থাকেন । আমি পাঠকগণের সুবিধার্থে 108 উপনিষদের নাম সুচিবদ্ধ করলাম ।
1- ईशावास्योपनिषद् /ইশাবাস্যোপনিষদ্
2- केनोपनिषद्  / কেনোপনিষদ্
3- कठोपनिषद् / কঠোপনিষদ্
4- प्रश्नोपनिषद् / প্রশ্নোপনিষদ্
5- मुण्डकोपनिषद् / মুণ্ডকোপনিষদ্
6- माण्डूक्योपनिषद् /  মাণ্ডূক্যোপনিষদ্
7- ऐतरेयोपनिषद् / ঐতরেয়োপনিষদ্
8- तैत्तिरीयोपनिषद् / তৈত্তিরীয়োপনিষদ্
9- छान्दोग्योपनिषद् / ছান্দোগ্যোপনিষদ্
10- बृहदारण्यकोपनिषद् / বৃহদারণ্যকোপনিষদ্
11- श्वेताश्वतरोपनिषद् / শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ্
12- कौषीतकि ब्राह्मणोपनिषद् / কৌষীতকি ব্রাহ্মণোপনিষদ্
13-मैत्रायण्युपनिषद् / মৈত্রায়ণ্যুপনিষদ্
14- कैवल्योपनिषद् / কৈবল্যোপনিষদ্
15- रुद्रहृदयोपनिषद् / রুদ্রহৃদয়োপনিষদ্
16- अमृतनादोपनिषद् / অমৃতনাদোপনিষদ্
17- एकाक्षरोपनिषद् /একাক্ষরোপনিষদ্
18- गायत्र्युपनिषद् /গায়ত্র্যুপনিষদ্
19- नादबिन्दूपनिषद् /নাদবিন্দূপনিষদ্
20- निरालम्बोपनिषद् / নিরালম্বোপনিষদ্
21- प्रणवोपनिषद् / প্রণবোপনিষদ্
22- मन्त्रिकोपनिषद् / মন্ত্রিকোপনিষদ্
23- शिवसंकल्पोपनिषद् / শিবসঙ্কল্পোপনিষদ্
24- शुकरहस्योपिषद् / শুকরহস্যোপনিষদ্
25- सर्वसारोपनिषद् / সর্বসারোপনিষদ্
26- स्कन्दोपनिषद् / স্কন্দোপনিষদ্
27- अथर्वशिर उपनिषद् / অথর্বশির উপনিষদ্
28- अध्यात्मोपनिषद् / অধ্যাত্মোপনিষদ্
29- अवधूतोपनिषद् / অবধূতোপনিষদ্
30- आत्मपूजोपनिषद् / আত্মপূজোপনিষদ্
31- आत्मबोधोपनिषद् / আত্মবোধোপনিষদ্
32- आत्मोपनिषद् / আত্মোপনিষদ্
33- आरुण्युपनिषद् / আরুণ্যুপনিষদ্
34- आश्रमोपनिषद् / আশ্রমোপনিষদ্
35- कठरुद्रोपनिषद् / কঠরুদ্রোপনিষদ্
36- कुण्डिकोपनिषद् / কুণ্ডিকোপনিষদ্
37- क्षुरिकोपनिषद् / ক্ষুরিকোপনিষদ্
38- जाबालदर्शनोपनिषद् / জাবালদর্শনোপনিষদ্
39- जाबालोपनिषद् / জাবালোপনিষদ্
40- जाबाल्युपनिषद् / জাবাল্যুপনিষদ্
41- तुरीयातीतोपनिषद् / তুরীয়াতীতোপনিষদ্
42- द्वयोपनिषद् / দ্বয়োপনিষদ্
43- नारदपरिव्राजकोपनिषद् / নারদপরিব্রাজকোপনিষদ্
44- निर्वाणोपनिषद् / নির্বাণোপনিষদ্
45- पंच ब्रह्मोपनिषद् / পঞ্চব্রহ্মোপনিষদ্
46- परमहंस परिव्राजकोपनिषद् / পরমহংস পরিব্রাজকোপনিষদ্
47- परमहंसोपनिषद् / পরমহংসোপনিষদ্
48- पैङ्गलोपनिषद् / পৈঙ্গলোপনিষদ্
49- ब्रह्मबिन्दुपनिषद् / ব্রহ্মবিন্দুপনিষদ্
50- ब्रह्मविद्योपनिषद् / ব্রহ্মবিদ্যোপনিষদ্
51- ब्रह्मोपनिषद् / ব্রহ্মোপনিষদ্
52- भिक्षुकोपनिषद् / ভিক্ষুকোপনিষদ্
53- मण्डलब्राह्मणोपनिषद् / মণ্ডলব্রাহ্মণোপনিষদ্
54- महावाक्योपनिषद् / মহাবাক্যোপনিষদ্
55- मैत्रेय्युपनिषद् / মৈত্রেয়্যুপনিষদ্
56- याज्ञवल्क्योपनिषद् / যাজ্ঞবল্ক্যোপনিষদ্
57- योगतत्त्वोपनिषद् / যোগতত্ত্বোপনিষদ্
58- वज्रसूचिकोपनिषद् / বজ্রসূচিকোপনিষদ্
59- शारीरकोपनिषद् / শারীরকোপনিষদ্
60- संन्यासोपनिषद् / সন্ন্যাসোপনিষদ্
61- सुबालोपनिषद् / সুবালোপনিষদ্
62- स्वसंवेद्योपनिषद् / স্বসংবেদ্যোপনিষদ্
63- हंसोपनिषद् / হংসোপনিষদ্
64- अक्षमालिकोपनिषद् / অক্ষমালিকোপনিষদ্
65- अक्ष्युपनिषद् / অক্ষ্যুপনিষদ্
66- अद्वयतारकोपनिषद् / অদ্বয়তারকোপনিষদ্
67- कलिसंतरणोपनिषद् / কলিসন্তরণোপনিষদ্
68- कालाग्निरुद्रोपनिषद् / কালাগ্নিরুদ্রোপনিষদ্
69- कृष्णोपनिषद् / কৃষ্ণোপনিষদ্
70- गणपत्युपनिषद् / গণপত্যুপনিষদ্
71- गरुड़ोपनिषद् / গরুড়োপনিষদ্
72- गायत्रीरहस्योपनिषद् / গায়ত্রীরহস্যোপনিষদ্
73- गोपालपूर्वतापिन्युपनिषद् / গোপালপূর্বতাপিন্যুপনিষদ্
74- चतुर्वेदोपनिषद् / চতুর্বেদোপনিষদ্
75- चाक्षुषोपनिषद् / চাক্ষুষোপনিষদ্
76- तुलस्युपनिषद् / তুলস্যুপনিষদ্
77- त्रिपुरोपनिषद् / ত্রিপুরোপনিষদ্
78- त्रिशिखिब्राह्मणोपनिषद् / ত্রিশিখিব্রাহ্মণোপনিষদ্
79- दक्षिणामूर्त्युपनिषद् / দক্ষিণামূর্ত্যুপনিষদ্
80- देव्युपनिषद् / দেব্যুপনিষদ্
81- ध्यानबिन्दूपनिषद् / ধ্যানবিন্দূপনিষদ্
82- नारायणोपनिषद् / নারায়ণোপনিষদ্
83- नीलरुद्रोपनिषद् / নীলরুদ্রোপনিষদ্
84- नृसिंहपूर्वतापिन्युपनिषद् / নৃসিংহপূর্বতাপিন্যুপনিষদ্
85- नृसिंहषट्चक्रोपनिषद् / নৃসিংহষট্ চক্রোপনিষদ্
86- पाशुपत ब्राह्मणोपनिषद् / পাশুপত ব্রাহ্মণোপনিষদ্
87- प्राणाग्निहोत्रोपनिषद् / প্রাণাগ্নিহোত্রোপনিষদ্
88- बह्ववृचोपनिषद् / বহ্ববৃচোপনিষদ্
89- भावनोपनिषद् / ভাবনোপনিষদ্
90- महोपनिषद् / মহোপনিষদ্
91- योगकुण्डल्युपनिषद् / যোগকুণ্ডল্যুপনিষদ্
92- योगचूड़ामण्युपनिषद् / যোগচূড়ামণ্যুপনিষদ্
93- योगराजोपनिषद् / যোগরাজোপনিষদ্
94- राधोपनिषद् / রাধোপনিষদ্
95- रामपूर्वतापिन्युपनिषद् / রামপূর্বতাপিন্যুপনিষদ্
96- रुद्राक्षजाबालोपनिषद् / রুদ্রাক্ষজাবালোপনিষদ্
97- रुद्रोपनिषद् / রুদ্রোপনিষদ্
98- लांगूलोपनिषद् / লাঙ্গূলোপনিষদ্
99- शरभोपनिषद् / শরভোপনিষদ্
100- सरस्वती रहस्योपनिषद् / সরস্বতী রহস্যোপনিষদ্
101- सावित्र्युपनिषद् / সাবিত্র্যুপনিষদ্
102- सीतोपनिषद् / সীতোপনিষদ্
103- सूर्योपनिषद् / সূর্যোপনিষদ্

104- सौभाग्यलक्ष्म्युपनिषद् / সৌভাগ্যলক্ষ্ম্যুপনিষদ্
105- मुद्गलोपनिषद् / মুদ্গলোপনিষদ্
106- परब्रह्मोपनिषद् / পরব্রহ্মোপনিষদ্
107- शाट्यायनीयोपनिषद् / শাট্যায়নীয়োপনিষদ্
108- शाण्डिल्योपनिषद् / শাণ্ডিল্যোপনিষদ্
নমস্কার বন্ধুরা ভালো লাগলে পোস্টটি অবশ্যই শেয়ার করুন ।
ওঁ নমঃ শিবায় , হর হর মহাদেব ।

রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮

পরমেশ্বরের নাম

নমস্কার , প্রিয় পাঠকগণ আজকে আমি পরমাত্মা পরমেশ্বরের নাম বা উপাধি নিয়ে কিছু আলোচনা করব । আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে ।

পরমাত্মা পরমেশ্বর নির্গুণ নিরাকার কিন্তু আবার তিনি সর্বগুণ সম্পন্ন , সর্বাধার , সর্বজ্ঞ । পরমেশ্বরের অনন্ত গুণ , অনন্ত কর্ম এবং অনন্ত তার স্বভাব । পরমেশ্বর নাম উপাধিরহিত হওয়া সত্বেও অনন্ত নামে পরিচিত । আমরা সকলেই ' শিবসহস্রনাম ' এবং ' বিষ্ণুসহস্রনাম ' এর কথা শুনেছি । প্রত্যেক প্রকার গুণ , কর্ম এবং স্বভাবের নিমিত্ত এক এক নাম কল্পিত হয়েছে । পরমাত্মা পরমেশ্বর অনন্ত , তিনি অসীম তাই এই সহস্র নামও বিশাল সমুদ্রের সামনে বিন্দুবৎ  বলে মনে হয় । আমি পরমেশ্বরের কয়েকটি নাম কারণ সহ উপস্থাপন করছি ।
1-- শিবু কল্যাণে - এই ধাতু দ্বারা ' শিব ' শব্দ সিদ্ধ হয় । কল্যাণস্বরূপ এবং কল্যাণকারী হওয়ার জন্য পরমেশ্বর ' শিব ' নামে বিখ্যাত ।
2-- ' যো মহতাং দেবঃ স মহাদেবঃ ' যিনি মহান দেবগণের দেব অর্থাৎ বিদ্বানগণেরও বিদ্বান , সূর্য্যাদি পদার্থের প্রকাশক তিনি মহাদেব । তাই পরমেশ্বরের নাম মহাদেব ।
3--' যঃ শঙ্কল্যাণং সুখং করোতি স শঙ্করঃ ' যিনি কল্যাণ এবং সুখ প্রদানকারী তিনি শঙ্কর । এইভাবে পরমেশ্বরের নাম শঙ্কর ।
4-- ' যো বিশ্বং বিভর্তি ধরতি পুষ্ণাতি বা স বিশ্বম্ভরো জগদীশ্বরঃ ' যিনি বিশ্বকে ধারণ এবং পোষণ করে থাকেন  , সেই পরমেশ্বর বিশ্বম্ভর নামে পরিচিত ।
5-- ' যোহখিলং জগন্নির্মাণেন বর্হতি বর্দ্ধয়তি স ব্রহ্মা ' যিনি সম্পূর্ণ অখিল জগৎ নির্মাণ পূর্বক বর্দ্ধিত করেন , তিনি ব্রহ্মা । তাই পরমেশ্বরের নাম ব্রহ্মা ।
6-- ' যো রোদয়ত্যন্যায়কারিণো জনান্ স রুদ্রঃ ' যিনি অন্যায়কারীকে দণ্ড দিয়ে রোদন ( কান্না ) করান তিনি  রুদ্র । তাই পরমেশ্বরের নাম রুদ্র ।
7-- ' আপো নারা ইতি প্রোক্তা আপো বৈ নরসূনবঃ তা যদস্যায়নং পূর্বং তেন নারায়ণঃ স্মৃতঃ ।' জল এবং জীবের নাম ' নারা ' সে অয়ন অর্থাৎ নিবাসস্থান যার , সেই সর্বপ্রাণীর মধ্যে ব্যাপক পরমাত্মার নাম নারায়ণ ।
8-- ' বেবেষ্টি ব্যাপ্নোতি চরাহচরং জগৎ স বিষ্ণুঃ ' চর এবং অচররূপ জগৎসংসারে ব্যাপক হওয়ার ফলে পরমাত্মার নাম বিষ্ণু ।
9-- ' য ইন্দতি পরমৈশ্বর্য্যবান্ ভবতি স ইন্দ্রঃ পরমেশ্বরঃ ' -- যিনি অখিল ঐশ্বর্য্যযুক্ত হন তিনি পরমেশ্বর ইন্দ্র ।
10-- ' যো লক্ষয়তি পশ্যত্যঙ্কতে চিহ্নয়তি চরাচরং জগদথবা বেদৈরাপ্তৈর্যোগিভিশ্চ যো লক্ষ্যতে স লক্ষ্মীঃ সর্বপ্রিয়েশ্বরঃ ' - যিনি সম্পূর্ণ চরাচর জগৎকে দেখেন , চিহ্নিত করেন অর্থাৎ দৃশ্য বানান , যেমন - শরীরের নেত্র নাসিকাদি এবং বৃক্ষের পত্র পুষ্প ফল মূল , পৃথিবী , জল , মৃত্তিকা , পাষাণ , চন্দ্র , সূর্য্যাদি চিহ্ন বানান তথা সকলকে দেখেন , সমস্ত শোভনীয় বস্তুর শোভা এবং যিনি বেদাদি শাস্ত্রজ্ঞ বা ধার্মিক বিদ্বান যোগিগণের লক্ষ্য অর্থাৎ দেখার যোগ্য সেই পরমেশ্বরের নাম ' লক্ষ্মী ।'
11-- ' সরো বিবিধং জ্ঞানং বিদ্যতে যস্যাং চিতৌ সা সরস্বতী ' -- যার বিবিধ জ্ঞান অর্থাৎ শব্দ অর্থ সম্বন্ধ প্রয়োগের জ্ঞান যথাবৎ হয় , সেই পরমেশ্বরের নাম সরস্বতী ।
12-- ' যঃ সর্বং জগৎ কর্তুং শক্নোতি স শক্তিঃ ' - যিনি সম্পূর্ণ জগৎকে তৈরী করতে সমর্থ তিনি শক্তি । এভাবে পরমেশ্বরের নাম ' শক্তি ' নামে পরিচিত ।
13-- ' যো বিশ্বমীষ্টে স বিশ্বেশ্বরঃ ' - যিনি বিশ্বসংসারের অধিষ্ঠাতা তিনি বিশ্বেশ্বর । এভাবে পরমেশ্বরের নাম " বিশ্বেশ্বর" বলে জগৎ বিখ্যাত ।
14-- ' যে প্রকৃত্যাদয়ো জড়া জীবাশ্চ গণ্যন্তে সংখ্যায়ন্তে তেষামীশঃ স্বামী পতিঃ পালকো বা ' -- যিনি প্রকৃতি আদি জড় এবং সকল প্রকার জীব প্রখ্যাত পদার্থের স্বামী এবং পালনকারী , এর দ্বারা সেই ঈশ্বরের নাম গণেশ বা গণপতি ।
15-- ' অঞ্জনং ব্যক্তির্ম্লক্ষণং কুকাম ইন্দ্রিয়ৈঃ প্রাপ্তিশ্চেত্যস্মাদ্যো নির্গতঃ পৃথগ্ভূতঃ স নিরঞ্জনঃ ' -- যে ব্যক্তি অর্থাৎ আকৃতি ম্লেচ্ছাচার , দুষ্টকামনা এবং চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের বিষয় বাসনার মার্গ থেকে পৃথক সে নিরঞ্জন । তাই পরমেশ্বর ' নিরঞ্জন ' নামে অভিহিত ।
16-- ' যস্মাৎ পূর্বং নাস্তি পরং চাস্তি স আদিরিত্যুচ্যতে , ন বিদ্যতে আদিঃ কারণং যস্য সোহনাদিরীশ্বরঃ ' - যার পূর্বে আর কিছুই নেই এবং সবকিছুর পরম , তাকে আদি বলা হয় , যার আদি কারণ কোনও কিছুই নেই সেই ঈশ্বর অনাদি নামে পরিচিত ।
17-- ' অন্তর্যন্তুং নিয়ন্তুং শীলং যস্য সোহয়মন্তর্যামী ' -- যিনি সমস্ত প্রাণী এবং অপ্রাণীরূপ জগতের অন্তরে ব্যাপক হয়ে সকলকে নিয়মিত চালিত করেন , তিনি অন্তর্যামী । এভাবে পরমেশ্বরের এক নাম অন্তর্যামী ।
18-- ' ভগঃ সকলৈশ্বর্য্যং সেবনং বা বিদ্যতে যস্য স ভগবান্ ' -- যিনি সমগ্র ঐশ্বর্য্যযুক্ত এবং ভজনা করার যোগ্য তিনি ভগবান । এভাবে পরমাত্মা পরমেশ্বরের নাম ' ভগবান ' প্রাপ্ত হয়েছে । প্রিয় বন্ধুগণ , আজ এই পর্যন্ত । আশা করি ভালো লেগেছে । আর ভালো লাগলে অবশ্যই আপনজনের মাঝে শেয়ার করতে পারেন ।
ওঁ নমঃ শিবায় , হর হর মহাদেব ।

সোমবার, ১৮ জুন, ২০১৮

Atmagyan আত্মজ্ঞান

নমস্কার বন্ধুগণ , আজকে আমি জীবদেহে আত্মার স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করবো । আদি গুরু শঙ্করাচার্য্য তার রচিত তত্ত্ববোধ এবং আত্মবোধ গ্রন্থে আত্মার স্বরূপ বলতে বলেছেন আত্মা সৎ , চিৎ , আনন্দময় । তার যথাযথ ব্যাখ্যা আমি এখানে উপস্থাপন করলাম ।
প্রশ্ন :-আত্মা কঃ ? (আত্মা কি ?)
উ :- সচ্চিদানন্দস্বরূপঃ ( আত্মা সৎ , চিৎ তথা আনন্দ স্বরূপ )
সৎ কিম্ ? ( সৎ কি ? )
উ :- কালত্রয়েহপি তিষ্ঠতীতি সৎ ( যা তিন কালেই সমানভাবে একরস থাকে তাই সৎ )
অর্থাৎ যা অতীত , বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এই তিনকালেই সমানরূপে একরস থাকে , যার জন্ম নেই , মৃত্যু নেই , যার বৃদ্ধি নেই , ক্ষয় নেই , যার রূপের পরিবর্তন হয় না , যার কোনও বিকার নেই এবং যা পূর্ণ , নানা প্রকার সৃষ্টি নির্মাণের পরেও যার পূর্ণতার হ্রাস হয় না এমন সর্বদা পূর্ণ তত্ত্বকে সৎ বলা হয় । শরীরের অন্য সবকিছুই মিথ্যা যার কোনও স্থায়িত্ব নেই । একমাত্র আত্মার স্থায়িত্ব থাকায় আত্মাকে ' সৎ ' বলা হয় ।
এবার প্রশ্ন চিৎ কিম্ ? ( চিৎ কি ? )
উত্তর :- জ্ঞানস্বরূপঃ ( জ্ঞান স্বরূপই চিৎ )
ব্যাখ্যা :- এই সম্পূর্ণ সৃষ্টিতে একমাত্র চেতন (চিৎ) তত্ত্বকে জ্ঞান স্বরূপ বলা হয় । চেতন শক্তি দ্বারাই সবকিছু জানা যায় । জড় প্রকৃতিতে জ্ঞান হয় না তাই তার দ্বারা কিছুই জানা যায় না ।  দেখা , জানা ও অনুভব করা প্রভৃতি কার্য্য চেতন (চিৎ) তত্ত্বই করে থাকে । শরীরের মধ্যে সেই চেতন তত্ত্বকে আত্মা বলা হয় । বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত পদার্থ চেতন তত্ত্বের দ্বারাই চেনা যায় , জানা যায় , দেখা যায় সুতরাং চেতন তত্ত্বই একমাত্র দ্রষ্টা । অন্য কিছুতেই দেখার শক্তি নেই তাই আত্মাই (চেতন তত্ত্বই) জ্ঞানস্বরূপ । জ্ঞান চেতনার গুণ , জড় পদার্থের নয় । তাই আত্মা চৈতন্য (চিৎ) স্বরূপ যা আত্মার দ্বিতীয় গুণ ।
এবার তৃতীয় গুণ আনন্দের নিমিত্য প্রশ্ন - আনন্দঃ কঃ? ( আনন্দ কি ?)
উত্তরে জগৎগুরু আদি শঙ্করাচার্য্য বলছেন - সুখস্বরূপঃ ( সুখ স্বরূপই আনন্দ )
ব্যাখ্যা :- এই সৃষ্টিতে আত্মাই একমাত্র শুদ্ধ , নির্বিকার , সৎ , চিৎ এবং আনন্দ তত্ত্ব বলে বিবেচিত । আত্মাই জ্ঞান স্বরূপ । অন্য সকলকিছু জড় প্রকৃতি দ্বারা নির্মিত যা অসত্য , অশুদ্ধ , জড় , বিকার লভ্য এবং দুঃখ স্বরূপ । আত্মজ্ঞানের অভাবে যখন মানুষ জড় প্রকৃতিকে অথবা শরীর , মন , আদিকে নিজের স্বরূপ বলে জ্ঞান করে থাকে তখন সে দুঃখের কারণ হয়ে যায় । আবার যখন মানুষ এইসব অজ্ঞান তথা ভ্রান্তিকে দূর করে পুনরায় আত্মাকে নিজের স্বরূপ বলে মেনে নেয় , তখন সে সকল প্রকার দুঃখকে দূর করে পরমানন্দ  বোধ করে থাকে । এটাই মানুষের জ্ঞানাবস্থা , যাকে প্রাপ্ত করে মনুষ্য সমস্ত প্রকার রোগ , শোক , দুঃখ , ক্লেশ , সন্তাপ ইত্যাদি থেকে মুক্ত হয়ে যায় । সে আনন্দ সাগরে নিমগ্ন থাকে , তার শাশ্বত সুখের অনুভূতি হয় । সে সকল প্রকার সাংসারিক দ্বন্দ্ব অতিক্রম করে থাকে কারণ আত্মা দ্বন্দ্বরহিত , সুখস্বরূপ এবং আনন্দস্বরূপ । যতক্ষণ মানুষ প্রকৃতিকে নিজের স্বরূপ মানতে থাকবে ততক্ষণ সে কখনই দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারবে না । আত্মজ্ঞানই পরম সুখের একমাত্র উপায় ।
ওঁ নমঃ শিবায় , হর হর মহাদেব ।

শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

শিবগীতা Shivagita

নমস্কার বন্ধুগণ , আশা করি আপনারা পরম করুনাময় ঈশ্বরের কৃপায় ভালই আছেন । আজকে আবার আমি পবিত্র শিবগীতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছি । আজকে লিখিত হচ্ছে বিশ্বরূপ দর্শণ নামক সপ্তম অধ্যায়ের 36 নম্বর শ্লোক । 
' সংসর্জনে বাহপ্যবনে বিনাশে বিশ্বস্য কিঞ্চিত্তব নাস্তি কার্য্যম্ । অনাদিভিঃ প্রাণভৃতামদৃষ্টৈস্তথাপি তৎস্বপ্নবদাতনোষি।।36।। ___________________________এর অনুবাদ :-- এই বিশ্ব সংসারের উৎপত্তি , রক্ষা এবং বিনাশের ক্ষেত্রেও তোমার কিছু কর্তব্য নেই । কেবল অনাদি সিদ্ধ দেহধারীদের কর্ম অনুসারে তুমি স্বপ্নবৎ সকল কার্য্য করে থাকো । জীব এবং শিবের মধ্যে কেবল বিম্ব আর প্রতিবিম্বের মতো পার্থক্য । __________________________ এখন আমি ব্যাখ্যায় আসছি মন দিয়ে পড়ুন  -- পরমেশ্বর শিবের বিশ্বরূপ দর্শণ করার পর শ্রীরামচন্দ্রের মধ্যে এই বিশ্ব জগৎ সৃষ্টির সত্য জ্ঞান উৎপন্ন হয়ে যায় । তিনি বেদান্তের পরম রহস্যকে উপলব্ধি করে তার অভিব্যক্তি ব্যাক্ত করছেন । এই সূত্রটি বেদান্তের সার । বেদান্ত অনুসারে ঈশ্বর স্বয়ং কর্ত্তা নন । তিনি কোনও কর্ম করেন না এবং কোনও কর্ম্মের ফলও প্রদান করেন না । সৃষ্টির উৎপত্তি , তার পালন এবং তার বিনাশ কার্য্য করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কোনও রকম কর্ত্তব্য নেই । ঈশ্বর স্বেচ্ছায় কোনও কার্য্য করেন না কিন্তু তার শক্তির ( মায়া ) দ্বারা সকল কার্য্য সাধিত হচ্ছে । তাই ঈশ্বরের মধ্যে কোনও রূপ কর্ত্তব্যের অভিমানও নেই যে , আমিই সৃষ্টি , পালন ও ধ্বংস ইত্যাদি কর্ম করি । শ্রীরামচন্দ্র শিবতত্ত্ব অর্থাৎ ঈশ্বরতত্ত্ব রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন , তাই তিনি পরমতত্ত্ব পরমেশ্বর শিবকে বলছেন -- যেভাবে মনুষ্য স্বপ্নে নানা প্রকার কর্ম করে থাকে যেমন স্বপ্নে পাঁখা মেলে আকাশে উড়ছে ইত্যাদি । কিন্তু বাস্তবে সেই মানুষ কখনই বলতে পারবে না যে আমি সেই কর্ম করেছি , আমি আকাশে উড়েছি । এসব তার বিচার অনুসারে নিজে নিজেই দর্শণ দিয়েছে । এখানে তো কোনও কর্মই সাধিত হয়নি , শুধু দেখেছে মাত্র যে আমি পাঁখা মেলে আকাশে উড়েছি । ঠিক এভাবেই হে পরমেশ্বর শিব ! আপনি সৃষ্টি , পালন এবং ধ্বংস ইত্যাদি কর্ম করে থাকেন এমনটি অজ্ঞানীজনরাই দর্শণ করেন । বাস্তবে এই সকল কার্য্য নিজ নিজ কর্মানুসারে হয়ে থাকে । আপনি কিছুই করেন না । এইসব কর্মসকল কেবল জীবাত্মার কর্ম অনুসারে হয়ে থাকে । জীবাত্মা ঈশ্বরের প্রতিবিম্ব তথা ঈশ্বর বিম্ব , যার কারণ জীবাত্মাই কর্ম করেন এবং কর্মের ফল ভোগ করেন । বিম্ব এবং প্রতিবিম্ব অর্থাৎ পরমাত্মা এবং জীবাত্মা অর্থাৎ ঈশ্বর এবং দেহধারীর মধ্যে এটাই পার্থক্য ।।36।। নমস্কার বন্ধুগণ শুভশিবরাত্রির শুভকামনার সাথে বিদায় নিচ্ছি , পরম মঙ্গলময় ঈশ্বর আপনাদের সকলের মঙ্গল করুক । আশা করি এই শিবগীতা লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে , আর যদি ভালো লেগে থাকে তবে দেরি না করে দয়া করে পোস্টটি আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ফেলুন ।   ওঁ নমঃ শিবায় , হর হর মহাদেব ।।

বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৮

শিব কে ? শিবের পরিচয়

নমস্কার বন্ধুরা আজকে আমি আলোচনা করতে চলেছি শিব কে ? , শিবের পরিচয় কি ?
 
পরমেশ্বর শিবকে প্রনাম জানিয়ে শুরু করছি আজকের আলোচিত বিষয় । প্রথমে জানবো শিব শব্দের অর্থ , শিব শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে " কল্যাণকারী " বা " মঙ্গল। " ভগবান শিবের পাঁচটি মুখ রয়েছে , এই পাঁচ মুখ দিয়ে তিনি জগতের মঙ্গল করে থাকেন , তাই তিনি কল্যাণকারী বা শিব নামে পরিচিত । পাঁচ মুখ যথাক্রমে বামদেব , কালাগ্নি , দক্ষিনেশ্বর , ঈশান এবং কল্যাণ সুন্দরম্ । আবার কোথাও একে ঈশান , তৎপুরুষ , অঘোর , বামদেব এবং সদ্যোজাত নামেও উল্লেখিত হয়েছে । শিবের দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে " চিত্তিশক্তি " যা সকল প্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত । শিবের তৃতীয় অর্থ " সদাশিব " । ব্রহ্মের সাকার এবং সগুণ রুপকে বলা হয় সদাশিব । তিনি আনুমানিক সাত হাজার বছর পূর্বে অবতরিত হয়েছেন । পরব্রহ্মের নানা শক্তির নানা অভিব্যাক্তিকে বলা হয়েছে দেবতা কিন্তু শিব এইসব দেবতাদেরও দেবতা । তাই তার এক নাম " মহাদেব "। যাকে পরব্রহ্ম বলা হয়েছে যিনি নিরাকার এবং নির্গুণ তিনিই ' শিব ' নামে বিখ্যাত । যা সৃষ্টির মূলতত্ত্ব তাই শিবতত্ত্ব । বিভিন্ন শাস্ত্রে একমাত্র শিবকেই ' ঈশ্বর ' রূপে মানা হয়েছে । ভগবান শিবই এই সম্পূর্ণ সৃষ্টির অনাদি দেব । যার মহিমা বেদ , পুরাণ , দর্শন , যোগ , তন্ত্র ইত্যাদি সাহিত্যে সর্বত্র বর্ণিত হয়েছে । ভারতের জন মানস যতটুকু বৈষ্ণব ধর্মে প্রভাবিত তার থেকে অনেক বেশি প্রভাবিত শৈবধর্মে । ভগবান শিব যোগী , ভক্ত , তান্ত্রিক , বেদান্তি , কর্মকাণ্ডী , উপাসক এবং দার্শনিক সকলের কাছে পূজনীয় । তিনিই জ্ঞান , কর্ম এবং ভক্তির আদি দেবতা । তিনিই পরমপুরুষ পরমব্রহ্ম । শিব এবং শক্তি মিলেই ব্রহ্ম তাই শিবকে ' অর্দ্ধনারীশ্বর ' বলা হয় । তার দক্ষিণ অঙ্গ শিব স্বরূপ এবং বাম অঙ্গ শক্তিরূপ । মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর শিবের স্তুতি করেছেন । মহাভারতের অনুশাসন পর্বে ( 15/11 ) লিখিত হয়েছে --- শিবের সমান দেব নেই , শিবের সমান গতি নেই , শিবের সমান দাতা নেই , শিবের সমান বীর নেই । বন্ধুরা শিব কে ? শিবের পরিচয় কি ? এর যথার্থ বর্ণনার শেষ নেই , এর আদি অন্ত নেই । সুতরাং আজ এই পর্যন্ত । পোস্টটি অনুগ্রহ করে সোস্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন । সবাইকে নমস্কার , ওঁ নমঃ শিবায় 

মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮

শিবগীতা Shivagita


শিবগীতা :- বিশ্বরূপ দর্শন নামক সপ্তম  অধ্যায় :--

ব্যাপ্নোষি সর্বা বিদিশো দিশশ্চ ত্বং বিশ্বমেকঃ পুরুষঃ পুরাণঃ। নষ্টেহপি তস্মিংস্তব নাস্তি হানির্ঘটে বিনষ্টে নভসো যথৈব ।।34।।
যথৈকমাকাশগমর্কবিম্ব ক্ষুদ্রেষু পাত্রেষু জলান্বিতেষু । ভজত্যনেকপ্রতিবিম্বভাবং তথা ত্বমন্তঃকরণেষু দেব ।।35।। ___________________________অনুবাদ :- আপনিই একমাত্র পুরাতন পুরুষ , সমস্ত দিক - বিদিক এবং সম্পূর্ণ বিশ্ব পরিব্যাপ্ত হয়ে বিরাজ করছেন । এই জগৎ ধ্বংস হয়ে গেলেও আপনার বিনাশ হয় না । যেমন করে ঘট নষ্ট বা ভেঙে গেলেও ঘটে ব্যাপ্ত আকাশের হানি হয় না ।
ব্যাখ্যা :-- বিশ্বরূপ দর্শণ করার পর রামচন্দ্র ঈশ্বরের প্রকৃত স্বরূপ জানতে পারেন । তাই তিনি পরমেশ্বর শিবকে বলছেন , হে প্রভু ! আপনিই ঈশ্বররূপে সর্বব্যাপী এবং বিনাশহীন । আপনি সর্বত্র বিরাজিত , আপনার থেকেই এই সম্পূর্ণ জগৎ সৃষ্টি হয়েছে । সৃষ্টির বিনাশ হয়ে গেলেও আপনার বিনাশ হয় না । যেমন ঘট ভেঙে গেলেও ঘটের ভেতরের আকাশ নষ্ট হয় না , সে বাহ্য আকাশে মিশে যায় । তেমনই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে গেলেও আপনার বিনাশ হয় না । ঘট নষ্ট হতে পারে কিন্তু তার মাটি নষ্ট হয় না , যার থেকে নতুন ঘটের নির্মাণ হতে পারে । অনরূপ ভাবে বিনাশহীন ঈশ্বর হতে পুনঃ নতুন সৃষ্টি হয় ।।34।।
যে প্রকার আকাশে একমাত্র সূর্য্যের বিম্ব জলপূর্ণ ছোট ছোট পাত্রে প্রতিবিম্বিত হয়ে অনেক প্রকার বলে মনে হয় , সেই প্রকার আপনি এক এবং অদ্বিতীয় হয়েও নানা লোকের নানা অন্তরে নানা রূপে প্রকাশিত হন
ব্যাখ্যা :-- সমস্ত শরীরধারীর মধ্যে যে আত্মা রয়েছে সেইসব আত্মা কি ভিন্ন ভিন্ন না এক । এই ভাবনাকে স্পষ্ট করার জন্য রামচন্দ্র বলছেন , একই সূর্য্যকে , একই প্রকাশকে যদি পৃথক পৃথক রূপের অনেক জলপাত্রে দেখা যায় , তবে একই সূর্য্যকে অনেক এবং ভিন্ন ভিন্ন বলে মনে হবে । অজ্ঞানীজন পাত্রের ভিন্নতার কারণ সূর্য্যকেই ভিন্ন ভিন্ন বা অনেক মনে করেন । তারা ভাবেন ভিন্ন পাত্রে ভিন্ন সূর্য্য রয়েছে । ঠিক এভাবেই বিভিন্ন মানুষের অন্তঃকরণরূপী পাত্রে একই ঈশ্বরের বিম্ব পতিত হয় কিন্তু অজ্ঞানীজন আত্মাকে ভিন্ন ভিন্ন বিবেচনা করে বলে থাকেন যে , সকলের আত্মা ভিন্ন ভিন্ন হয় । বাস্তবে অন্তঃকরণই ভিন্ন ভিন্ন হয় , আত্মা সকলের একই হয় । যে ব্যাক্তি অন্তঃকরণকেই আত্মা মনে করেন সেই ব্যাক্তি আত্মাকে ভিন্ন ভিন্ন বা অনেক বলে মনে করেন ।।35।।
নমস্কার বন্ধুগণ ভালো লাগলে পোস্টটিকে অবশ্যই সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন ।
ওঁ নমঃ শিবায় , হর হর মহাদেব।

সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮

ধর্ম কি ? What is dharma ?

বন্ধুরা অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে , ধর্ম কি ? ধর্ম কাকে বলে ? এর আক্ষরিক অর্থ কি ? 
বন্ধুগণ আজকে আমি ধর্ম কি ? এই বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা করবো ।
ধর্ম মানে ধারণ , অর্থাৎ যাকে ধারণ করা যায় , ধর্ম মূলতঃ কর্ম প্রধান । কোনও কিছুর গুণ সমূহকে যা প্রদর্শিত করে থাকে তাই ধর্ম । ধর্মকে আমরা গুণও বলতে পারি । ধর্ম শব্দে গুণ , এই অর্থ শুধুমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয় , পদার্থের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । যেমন জলের ধর্ম প্রবাহিত হওয়া , আগুনের ধর্ম আলো বিকিরণ করা , গরম প্রদান  করা এবং স্পর্শে বস্তুকে পুড়ে ছাই করে দেওয়া ইত্যাদি । ধর্ম পদার্থের হোক কিংবা মানুষের , সারা পৃথিবীর পদার্থ এবং মানুষের ধর্ম একই হয়ে থাকে । তারজন্য দেশ রং রূপ ভেদে কোনও পার্থক্য হয় না । ধর্ম সার্বকালিক অর্থাৎ প্রত্যেক কালে প্রত্যেক যুগে ধর্মের স্বরূপ একই থেকে যায় । ধর্ম কখনও বদল হয় না । উদাহরণ হিসেবে জল কিংবা আগুনের ধর্ম সৃষ্টি হতে আজ পর্যন্ত একই রয়ে গিয়েছে , কোনও রূপ পরিবর্তন ঘটেনি । ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে মূলভূত পার্থক্য আছে । যেহেতু ধর্মের অর্থ গুণ এবং জীবনে ধারণ করার যোগ্য বোঝায় , সেহেতু ধর্ম প্রত্যেক মানুষের জন্য এক বা সমান হওয়াই আবশ্যক । যখন প্রত্যেক পদার্থের ধর্ম সার্বভৌমিক তখন প্রতিটি মানব জাতির ধর্মও সার্বভৌমিক বলে মনে করি । সুতরাং মানুষের ক্ষেত্রে তার ধর্ম মানেই মানবধর্ম । মানবতা যেমন সত্য কথা বলা , অসহায় দুর্বলকে সাহায্য করা , অন্যের জিনিস আহরণ না করা ইত্যাদি । এটাই হিন্দু কিংবা মুসলমান সকলের ধর্ম , এটাই মানবধর্ম । হিন্দু , মুসলমান , খ্রিস্টান , বৌদ্ধ প্রভৃতি ধর্ম মূলতঃ মানুষের ধর্ম নয় , এসব এক একটা সম্প্রদায় মাত্র । সম্প্রদায় যা এক পরম্পরাকে মেনে চলা সমূহ । নমস্কার বন্ধুরা , ধর্ম কি ? নিয়ে বক্তব্য এখানেই শেষ করলাম । ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুক । ওঁ নমঃ শিবায় ।।

বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৮

শিবগীতা কি ? What is Shivagita

নমস্কার বন্ধুরা , আজকের আলোচ্য বিষয় হলো " শিবগীতা " কি ? 
আপনারা সকলেই হয়তো ভগবদ্ গীতা সম্পর্কে জানেন কিন্তু শিবগীতা সম্পর্কে ঠিক ততটা জানেন না । তাই আজকে আমি শিবগীতা সম্বন্ধেে একটা
সাধারন জ্ঞান প্রকাশিত করছি । যে প্রকার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে ভগবদ্গীতা  বের হয়েছে , অনুরূপ ভাবে ভগবান শিবের মুখারবিন্দ থেকে বের হয়েছে এই " শিবগীতা। " মহাভারতের ভীষ্ম পর্ব থেকে ভগবদ্গীতা এসেছে , এবং সেখানে মোট আঠারোটি অধ্যায় রয়েছে । তাকে কৃষ্ণার্জুন সংবাদ বলে উল্লিখিত করা হয়েছে । ঠিক তেমনই পদ্মপুরাণে উল্লিখিত শিবরাঘব সংবাদ শিবগীতা নামে প্রসিদ্ধ । এখানেও আঠারোটি অধ্যায় রয়েছে । এই আঠারোটি অধ্যায় যথাক্রমে - শিবভক্তি নিরূপণ , বৈরাগ্য উপদেশ , বিরজাদীক্ষা নিরূপণ , শিব প্রাদুর্ভাব , রামকে বর প্রদান , বিভূতি যোগ , বিশ্বরূপ দর্শন , পিণ্ডোৎপত্তি কথন , দেহ স্বরূপ নির্ণয় , জীব স্বরূপ কথন , জীব গতি নিরূপণ , উপাসনা জ্ঞান ফল , মোক্ষ নিরূপণ , পঞ্চকোশোপপাদন , ভক্তিযোগ , গীতা অধিকারী নিরূপণ , ব্রহ্ম নিরূপণ যোগ এবং জীবন্মুক্তি স্বরূপ নিরূপণ যোগ । যেভাবে অর্জুনের প্রশ্নের উত্তরে ভগবদ্গীতা সামনে এসেছে , সেভাবেই শ্রীরামচন্দ্রের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে প্রকাশিত হয়েছে এই শিবগীতা । শিবগীতা আধ্যাত্ম বিদ্যার এক অসামান্য গ্রন্থ যেখানে বেদান্তের সার বস্তু সমাহিত হয়েছে । বেদান্ত যাকে ব্রহ্ম বলে বলেছেন তাকে এখানে শিব নামে অভিহিত করা হয়েছে । শিবই এই সৃষ্টির নির্মাতা , পালন কর্ত্তা এবং সংহার কর্ত্তা । সম্পূর্ণ সৃষ্টি পরমেশ্বর শিবের শক্তির রূপ বলা হয়েছে , বেদান্ত তাকে মায়া শক্তি নামে আখ্যায়িত করেছেন । এই মায়াশক্তিকে অতিক্রম করে পরব্রহ্ম বিষয়ে জ্ঞাত হওয়াই মুক্তির একমাত্র উপায় । এই জ্ঞান তথা মুক্তির জন্যই পরমেশ্বর শিব ব্রহ্ম , শিব থেকে সৃষ্টির রচনার বর্ণনা , শরীর রচনার বর্ণনা , শিব সাধনা , শিবপূজার বিধান , সংসারের অসারতা , তত্ত্বজ্ঞান , কর্মফল , বিরজা দীক্ষা , শিবের বিরাট স্বরূপ , শিবের বিভূতি , জীবের গতি , মুক্তির স্বরূপ , ভক্তির বিধি , ধ্যান যোগ ইত্যাদি অনেক আধ্যাত্মিক রহস্যের উদ্ঘাটন করেছে এই শিবগীতা । এই দৃষ্টিতে শিবগীতার মহত্ব সর্বাধিক । জ্ঞান প্রাপ্তির জিজ্ঞাসুদের জন্য এই শিবগীতা গ্রন্থ অতি মহত্বপূর্ণ । আশাকরি কিছুটা হলেও , শিবগীতা কি ? এর উত্তর দিতে পেরেছি । যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তবে দয়া করে Share করবেন । নমস্কার , ওঁ নমঃ শিবায় ।

শনিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৮

Shivagita শিবগীতা

শিবগীতা :--বিশ্বরূপ দর্শণ নামক সপ্তম অধ্যায়

 
 অজ্ঞানমূঢ়া মুনয়ো বদন্তি পূজোপচারাদিব হি ক্রিয়াভিঃ।
তোষং গিরীশো ভজতীতি মিথ্যা কুতস্ত্বমূর্তস্য তু ভোগলিপ্সা ।।32।।
কিঞ্চিদ্দলং বা চুলকোদকং বা যস্ত্বং মহেশ প্রতিগৃহ্য দৎসে ।
ত্রৈলোক্যলক্ষ্মীমপি যজ্জনেভ্যঃ সর্বত্ববিদ্যাকৃতমেব মন্যে ।।33।।
🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼
অনুবাদ -- জ্ঞানহীন অবিচারী মুনিরাই বলেন , ভগবান শিব পূজা বা যজ্ঞাদির মতো বাহ্যিক কর্ম দ্বারা সন্তুষ্ট হয় ,কিন্তু একথা প্রকৃত পক্ষে মিথ্যা । কারণ যিনি মূর্তিহীন , পরিমাণহীন এবং অনন্ত তার কোনও ভোগবাসনা নেই ।
এর ব্যাখ্যা --- বিশ্বরূপ দর্শণ করার পর রামচন্দ্রের আত্মজ্ঞানের উদয়  হয় । তখন রামচন্দ্র ভগবান শিবকে বললেন - যে ব্যক্তি তত্ত্বজ্ঞানহীন তথা যে কখনও বিচারই করেননি , যে শিব স্বয়ং সকলের পালন পোষন করে থাকেন , সেই শিব তোমাদের পূজা , পাঠ , যাগ-যজ্ঞাদির কোনও রকম অপেক্ষা করে না এবং এসব বাহ্য কর্মের দ্বারা সন্তুষ্টও হয় না । অজ্ঞানী মূঢ় ব্যক্তিরাই পরমেশ্বর শিবকে পূূজা , পাঠ , যজ্ঞাদির দ্বারা প্রসন্ন করার প্রযত্ন করেন । হে পরমেশ্বর ! আপনি তো নিরাকার , পরিমানহীন এবং অনন্ত । আপনার মানুষের দেওয়া ভোগের কোনও লিপ্সা নেই এবং তাতে আপনি প্রসন্নও হন না । যার ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞানই নেই সেই এরূপ অবিচার পূর্ণ কথা বলে থাকেন ।।32।।
এইরূপ কিঞ্চিৎ বেলপাতা এবং সামান্য জল দিয়ে যে ব্যক্তি প্রীতির সাথে আপনার অর্চণা করে , আপনি তা তৃপ্তির সাথে স্বীকার করে সন্তুষ্ট পূর্বক তাকে ত্রিলোক ও ঐশ্বর্য্য দান করেন এটাও মায়া দ্বারা কল্পিত এরূপ আমি মনে করি ।
এর ব্যাখ্যা --- শ্রীরামচন্দ্র বললেন যে -- যে ব্যক্তি মনে করেন ভগবান শিবকে দু-একটি বেলপাতা আর সামান্য জল দিয়ে অভিষেক করলেই তিনি প্রসন্ন হয়ে তাকে মুক্ত করে দেবেন , এটাও মায়া প্রসূত । অজ্ঞানতা বশতই লোক এরূপ মনে করেন । ।33।।
বন্ধুরা আমার এই ধর্মীয় পোস্ট শিবগীতা হয়তো আপনাদের ভালো লেগেছে , ভালো লাগলে অবশ্যই সোস্যাল মিডিয়াতে Share করুন । ওঁ নমঃ শিবায় , নমস্কার 

উপনিষদ্ পরিচয় UPANISHAD PARICHAY

প্রিয় পাঠক আপনাদের সবাইকে নমস্কার জানিয়ে শুরু করছি আলোচ্য বিষয় উপনিষদ্ পরিচয় । উপনিষদ হিন্দু ধর্মের মহত্ত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ । যা ব...